বাজারে এসেছে শীতকালীন সবজি। যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তাদের জন্য শীতকাল উপযুক্ত সময়। দেহের ওজন দ্রুত কমাতে শীতকালীন খাবার কার্যকরী। শীতে অনেকেরই এক্সারসাইজের আগ্রহ কমে যায়। এ অবস্থায় যারা ওজন কমানোর ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ তাদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবার হতে পারে বিকল্প এক উপায়। শীতের কিছু শাক এক্ষেত্রে শরীরের ওজন কমানোর সহায়ক হতে পারে।
- টমেটো – শীতকালীন এ সবজিটি যেমন কাঁচাও খাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে রান্না করেও খাওয়া যায়। শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে টমেটোর ভূমিকা অতুলনীয়। টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ফলিক এসিড লাইকোপিন, ক্রোমিয়াম ও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। একটি টমেটোতে ১৬ ক্যালরি থাকে। এটা উচ্চ দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই রকম আঁশসমৃদ্ধ যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ফুলকপি ও ব্রকলি- প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আর বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের পাশাপাশি ব্রকলি ও ফুলকপিতে রয়েছে ফটো কেমিকেল যা চর্বি জমতে দেয় না শরীরে। ওজন কমাতে সাহায্য করে। লো ক্যালোরি খাবার হওয়ার পাশাপাশি এতে ফাইবারও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যার কারনে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে। তা ছাড়াও এতে ইন্ডোল, গ্লুকোসাইনোলেট এবং থায়োসাইনেট রয়েছে যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও সাহায্য করে। এক কাপ (২৪০ গ্রাম) কাটা ফুলকপিতে আছে ২৭ ক্যালরি শক্তি, ২ গ্রাম প্রোটিন।
- সরিষাশাক- শীতে গ্রামাঞ্চলে মাঠজুড়ে সরিষাক্ষেত দেখা যায়। শীতে গ্রামের মানুষ তাই প্রায় সময় সরিষাশাক খান। কম ক্যালরিযুক্ত ভিটামিন সি ও ফাইবার সমৃদ্ধ এই শাক ওজন কমাতে সহায়ক।
- বাঁধাকপি – এটি একটি পাতাজাতীয় সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বাঁধাকপির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও। সালাদে শসা, গাজর, টমেটোর সঙ্গে কচি বাঁধাকপি মেশালে তার স্বাদ হয় চমৎকার। যারা ওজন কমাতে চান তারা তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন।
- পালং শাক- অনেক পুষ্টিগুণে ভরা পালংশাক ওজন কমাতেও সহায়ক। অনেকভাবেই পালংশাক খাওয়া যায়। আলুর সঙ্গে অথবা কটেজ চিজ দিয়ে বা ভেজে নানাভাবে খাওয়া যায় এই পুষ্টিকর শাক। নারী ও বয়স্ক মানুষের জন্য এটি খুব স্বাস্থ্যকর শাক। এতে কম ক্যালরি থাকায় তা ওজন কমাতেও সহায়ক। এক কাপ পালং শাক খাদ্য আঁশের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন এ ও কে-এর দৈনিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
- শসা – শসায় রয়েছে ডিটক্সিফিকেশন গুণ। শসায় ফাইবার আর পানির পরিমাণ বেশি থাকায় বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমায় এই সবজিটি। দুপুরের খাবারে প্রতিদিন শসা রাখতেই পারেন। এটি ওজন কমাতে টনিকের মতো কাজ করে। শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় ভূমিকা রাখে। শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। যারা দেহের ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য শসা আদর্শ খাবার।
- মুলাশাক- শীতের আরেকটি পরিচিত সবজি মুলা। আর এই সময়ে মুলাশাকও অনেকে বেশ আয়েশ করেই খান। মুলাশাকে প্রচুর পুষ্টি ও ফাইবার আছে। এ শাকে ক্যালরি খুব কম, তাই এটি সহজে হজম হয়। এই শাক কয়েকভাবেই রান্না করা যায়। শীতে তাই ওজন কমাতে এই শাক বেছে নিতে পারেন।
- গাজর – শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি হল গাজর। আমাদের দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে যেসব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রয়োজন তার সবই আছে গাজরে। গাজরে রয়েছে থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ফলেট এবং ম্যাংগানিজ যা স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। এ ছাড়া আরও আছে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম। গাজরের মধ্যে থাকা ফাইবার আর নিউট্রিয়েন্ট মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। তাই আপনার খাবার ম্যানুতে প্রতিদিন সালাদ বা সবজি হিসেবে গাজর রাখুন ।
- শালগম – শালগমে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ভিটামিন কে। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে অথচ ক্যালরির পরিমাণ থাকে খুবই কম। ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে কলেস্টেরলে সমস্যা জড়িত। যাদের কলেস্টেরলের সমস্যা আছে তারা শালগম খেয়ে উপকৃত হতে পারেন। এর কারণ শালগম পাকস্থলীতে অনেক বেশি পিত্তরস শোষণ করতে পারে যা শরীরের খারাপ কলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এভাবেই কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে শালগম।
- মেথিশাক- আলু ও গাজরের সঙ্গে মেথিশাক মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন অনেকে। মেথির বেশ কিছু উপকারিতা আছে। এটি খুব ভালো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পরিমিত মেথি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, ওজন কমে। মেথি হার্ট ও ব্লাড প্রেশারের জটিলতাও কমাতে সহায়ক। মেথিশাকে আছে অ্যাসকরবিক এসিড ও বিটা ক্যারোটিন।
অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করা একটি জটিল বিষয়। আপাত দৃষ্টিতে এটি খুব সহজ কাজ মনে হলেও এর জন্য প্রয়োজন অসীম ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস। খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিদিন করতে হবে ব্যায়ামও। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম, আর প্রচুর পানি পান করুন। মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন একই সঙ্গে। স্থায়ীভাবে ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ আদর্শ খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রাই সর্বোত্তম পন্থা।