January 17, 2025, 5:42 pm

অনুমোদন পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় আটকে আছে গলাচিপা সেতুর নির্মাণ কাজ

সাজ্জাদ আহমেদ মাসুদ, গলাচিপা (পটুয়াখালী);
অনুমোদন পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় আটকে আছে গলাচিপা সেতুর নির্মাণ কাজ

পটুয়াখালী জেলার বহুল কাঙ্খিত গলাচিপা সেতুটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে একনেকে অনুমোদন হয়েছে এবং প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘গলাচিপা সেতু’। কাজটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর। সর্বশেষ সংশোধনীতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা।

পটুয়াখালীর রামনাবাদ নদীর ওপর প্রস্তাবিত ‘গলাচিপা সেতু’ নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে গলাচিপা উপজেলার নিরবিচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। প্রতিদিন এই নদী থেকে ফেরি পারাপার হয়ে জেলা, বিভাগ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে শতাধিক যানবাহন।

গলাচিপা ফেরীঘাট

ফেরি ও ট্রলারে পারাপারে সময় নষ্টের পাশাপাশি নানামুখী ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিভাগীয় শহর ও রাজধানীগামী যাত্রীরা। মুমূর্ষু রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পারাপারের জন্য। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত গলাচিপা উপজেলার জেলা মহাসড়কের (জেড-৮৮০৬) ৭০তম কিলোমিটারে রামনাবাদ নদীর ওপর ‘গলাচিপা সেতু’ নির্মাণ ৫২১ কোটি ২ হাজার ৫৯৯ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সালে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনো সেতু নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ।

একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে দিন পার করছেন গলাচিপাসহ পার্শ্ববর্তী দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার ১০ লাখ মানুষ। তিন উপজেলার মানুষের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন রামনাবাদ নদীর ওপরে ‘গলাচিপা সেতু’ নির্মাণ হবে।

রামনাবাদ নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগীয় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। সারাদেশের সাথে চালু হবে ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ। এই অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের কমবে পথ, বাঁচবে সময়। দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনায় রূপান্তরিত হবে দক্ষিণাঞ্চল।

গলাচিপা খেয়াঘাট

অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মো. সোহাগ বলেন, গত ত্রিশ বছর ধরে শুনে আসছি গলাচিপা সেতুটি হবে কিন্তু বাস্তবে কোন কর্যক্রম চোখে পড়ছে না। রোগীভর্তি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির জন্য। ব্রিজটি হোক এটা আমাদের জোর দাবি।

ট্রাক ড্রাইভার মো. আলআমিন বলেন, ঢাকা থেকে পাঁচ ঘন্টায় আসি হরিদেবপুর ফেরিঘাট। এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্রে পথ ওপারে গলাচিপা শহর। ফেরি পারাপারে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। সেতু হলে মাত্র এক মিনিটেই নদী পার হওয়া যায়।

স্থানীয় ঠিকাদার পবিত্র কুমার নাগ বলেন, জীবনের পঞ্চান্ন বছর পার করেছি। গলাচিপা শহরের অপর প্রান্তে হরিদেবপুর গ্রামে আমার বাড়ি। প্রায় প্রতিদিনই জীবন জীবিকার তাগিদে খেয়া পারাপার হতে হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে শুনে আসছি গলাচিপা নদীর ওপরে সেতু হবে। এই শুনি সেতু হচ্ছে আবার এই শুনি হচ্ছেনা। এই নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব আছি। আমাদের এ সেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি নির্মাণ হলে গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রায় দশ লাখ মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তণ হবে।

গলাচিপা উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, গলাচিপা সেতুটি আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আমরা ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করতে যাবো ইনশাল্লাহ। অনতিবিলম্বে এর কাজ শুরু হবে। সেতুটি আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল। ‘গলাচিপা সেতু’র কারণে গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার আট-দশ লাখ মানুষের যোগাযোগের ভোগান্তি লাঘব হবে।

পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের সদস্য ইয়াহিয়া খান বলেন, যে এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা যতো ভালো সে এলাকা তত উন্নত হয়। আপনারা যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন ‘গলাচিপা সেতু’ এ প্রসঙ্গটি অত্যন্ত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ।

রামনাবাদ নদীর ওপর ‘গলাচিপা সেতু’ করা হচ্ছে, করতে হবে এবং একনেকে প্রস্তাবিত- এ কথাগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জনবহুল এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সেতু না থাকার কারণে পটুয়াখালী, বরিশাল ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাতায়াত পথে যেভাবে কষ্ট করছে এ কষ্টটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। উপজেলার প্রতিটি মানুষই এ কষ্টের সাথে জড়িত। অতি দ্রæত রামনাবাদ নদীর ওপর ‘গলাচিপা সেতু’ করা হলে এ উপজেলার মানুষজন আরও সাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারতো। গলাচিপার এ শহরটি এরকম অবহেলিত থাকতোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে দাঁড়াতে পারতো।

গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীর ওপর ‘গলাচিপা সেতু’ লাখ লাখ লোকের প্রাণের দাবি। গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী এই তিন উপজেলায় দশ লাখ লোকের বসবাস। পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার লোকজন গলাচিপা উপজেলার রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। তাদের বের হওয়ার আর কোন রাস্তা নাই। কাজেই এই সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন। সেতুটি দীর্ঘদিনের দাবি এই এলাকার লোকের। আমরা ইদানীং শুনতে পারছি এ সেতুর কাজ শুরু হবে, মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে। যত দ্রুত ‘গলাচিপা সেতুটি’ নির্মাণ হবে অতই মানুষের স্বপ্ন পুরণ হবে। যার ফলে উপকূলীয় তিন উপজেলার মানুষের আর্তসমাজিক উন্নয়নে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, গলাচিপা উপজেলার রামনাবাদ নদীতে দীর্ঘদিনের একটি সেতু নির্মাণের দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। তাদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সেতুটি অতি দ্রুত নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন। রামনাবাদ চ্যানেলে সেতুটি বর্তমানে প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত। সেতুটি নির্মাণ হলে মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াতে কষ্ট এবং খেয়া ও ফেরি পারাপারের যে দুর্দশা তা লাঘব হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) পটুয়াখালীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদ করিম জানান, প্রকল্পের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলমান। অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু হবে।”

Connect Us:


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা