December 8, 2024, 4:09 am

পুলিশের কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে; বরগুনার এসপি

তরিকুল ইসলাম রতন, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ;

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে বরগুনা পুলিশ সুপারকে নিয়ে করা প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেছে এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা দাবী করে তিনি বলেন জেলা পুলিশের মহতী কর্মকাণ্ড দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সন্ত্রাসীর সাথে বিরল বন্ধুত্ব নিয়ে এসপি জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, জুন মাসের প্রথম দিকে মিলন নামল একজন প্রবাসী তার ব্যাক্তিগত সমস্যা নিয়ে আইনি সহায়তার জন্য আমার অফিসে দেখ করতে আসেন। কথাবার্তার এক ফকে তিনি আমাকে বলে বরগুনার সাবেক এসপি, ঢাকা সিটি মেয়র, ত্রান প্রতিমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল, বরগুনার সাংসদ, স্বরাট্রমন্ত্রীসহ পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তোলা সেলফি দেখাতে থাকেন, এবং বলেন সবার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। তিনি আরও বলেন তার বড় ভই ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী, তার নির্বাচন করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয় সেজন্য তিনি আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করি। যেহেতু তার সাথে উর্ধতন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছবি ছিলো তাই প্রাথমিকভবে ধরেই নেয়া যায় তিনি পুলিশের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।

এরপর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কনফারেন্সে যোগদান শেষে বসুন্ধরা শপিংমলে যাই। সেখনে মিলন দূর থেকে আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করেন ভাই কেমন আছেন, কোথায় যান? এসব বলার ফাকে আমার সাথে একটি সেল্ফি তোলেন৷ তখন আমি ইউনিফর্ম পড়িহিত ছিলাম৷ পরে পোষাক চেইঞ্জ করার পরেও তিনি আমরও সেলফি তুলেন। এরপর আমি ও আমার দেহরক্ষী মোবাইলের দোকানের দিকে যাই আর তিনি চলে যান। মিলন খুব সরল প্রকৃতির। তাকে দেখে বোঝর উপায় নেই তিনি অপরাধী কিনা, তাছাড়া তারসাথে ভিআইপিদের ছবিও আছে।

তবুও মিলনের বিরুদ্ধে কোন অপরাধের প্রমান পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী কোন সাংবাদিককে থানায় বা আমার অফিসে এনে কুরআন হাতে নিয়ে শপথ করানো হয়নি। এ অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্য আমাকে নিয়ে ধারাবাহিক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে কুচক্রীরা।

গরু-ছাগল, ডিম ঘুসের অভিযোগের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, পুলিশ সদস্যদের বদলীর জন্য কোন দরনের টাকা পয়সা লাগেনা। বদলীর জন্য নির্ধারিত সংখ্যক গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও রেঞ্জ কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসরন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রাক্তন এসপির বদলী উপলক্ষে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ লাইনসের হলরুমে নৈশভোজের আয়োজনের বিষয়ে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। ওই আয়োজনে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিলোনা। আমার গরু-ছাগল পালকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এমনকি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে গরু ছাগল নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা অসত্য এবং নিকৃষ্ট মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আবার কোথাও থানা পরিদর্শনে গিয়ে ডিম মুরগি আনার মত জঘন্য বিষয় উল্লেখ করে আমাকে জনসম্মুখে অপমানিত করা হয়েছে।

মহিলা পুলিশ সদস্যদের নাচ গানের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, পুলিস সদস্যদের শারীরিক সুস্থ্যতা ও কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ লাইনসে আমি আসার আগেই একটি ব্যামাগার ছিলো। তবে মহিলা ব্যারাকে বিশেষ ব্যায়ামাগার বলতে কেন কক্ষের অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন প্রোগ্রামে অতিথি শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাকে বিশেষ অর্থের প্রয়োজন হয়। পুলিশের অনেকেই উপস্থাপনা, আবৃত্তি, নাচ ও গানে পারদর্শী। পুলিশের স্বার্থে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে কালচারাল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার উপযোগী করা হয়েছে। ফলে কোন প্রগ্রামে এখন বাইরে থেকে শিল্পী আনার প্রয়োজন হয়না। প্রায়ই নারী, পুরুস পুলিষ সদস্যদের উপস্থাপনা, আবৃত্তি, নাচ, গানের রিহার্সাল অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সাংস্কৃতিক দলের সদস্যসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণের জন্য উপস্থিত থাকেন। এবিষয়টিকে ভিন্নখতে প্রবাহিত করে রিহার্সালে অন্য কারও প্রবেশের অনুমতি নাই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। এমনকি টেনিস ও ব্যাডমিন্টন মাট বানানোর জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আনার কথাও বলা হয়েছে, যার কোন ভিত্তি নেই। পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে এ মাঠগুলো বানানো হয়।

সবশেষে বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, জেলা পুলিশ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে৷ সোর্সমানির সমুদয় অর্থ প্রচলিত বিধি অনুসরণ করে জেলা পুলিশের সকল ইউনিট ইনচার্জদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। যার প্রমান প্রতিটি ইউনিট ইনচার্জগণ নিয়মিত তাদের নিজ স্বাক্ষরে টাকা গ্রহণের বিষয়ে রেজিস্টারে পাওয়া যাবে। পুলিশ বিভাগে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক চলে না। ব্যক্তির যোগ্যতার মাপকাঠি তে তা বিচার করা হয়ে থাকে। জেলা পুলিশের পরিচালিত দৈনন্দিন রুটিন কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার জন্য কাউকে ঘনিষ্ঠজন আবার কাউকে ভাগ্নে হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মহল একটি কুচক্রী মহল জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। এসব অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রোনেদিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা