নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোঃ আহসান হাবিব খান বলেছেন, কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করে, সহায়তা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। যেখানে সবথেকে বড় সহায়তা করে সাংবাদিকরা। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিকদের) ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের প্লাটফর্ম ছাড়া আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতাম না। এখন পর্যন্ত আপনারা যাই করেছেন সঠিক করেছেন, এখানে আমার কোন নেগিটিভিটি থাকলে সেটাও দিয়েছেন, পজেটিভ থাকলে সেটাও দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভা শেষে রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় নির্বাচন কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খান আরও বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জেস্ কেমন সেটা দেখতে এখানে এসেছি। এখানে বিভাগীয় প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তারা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
ভোটার উপস্থিত করণের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতির দায়িত্ব হচ্ছে প্রার্থীর। আর আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা দেয়া। যাতে করে ভোটাররা বাসা থেকে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আসতে পারে এবং নিজের ভোট দিতে পারে।
আমাদের আইনে রয়েছে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সর্বোপরি সাহায্য-সহযোগীতা করবেন কিন্তু এখানে জেলা প্রশাসকই রিটার্নিং অফিসার হওয়ায় তিনিই তাকে সহায়তা করবেন। আর ওনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই সহকারী রিটার্নিং অফিসার। তারা এরআগে নির্বাচনের কাজ করেছেন, এবারেও করবেন।
তিনি বলেণ, এখানে কোন ব্যতয় ঘটলে আপনারা (সাংবাদিক) তো আছেন। যেমন ভালো সেখানে সেটার কথা বলবেন, তেমনি আমি ঠিকভাবে কাজ না করলে সেটিও বলবেন, কোন অসুবিধা নেই। সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে বের হয়ে যদি ভোটার সন্তুষ্টির কথা বলে সেটাও প্রচার করবেন, আবার কেউ যদি অরাজকতা অসন্তোষের কথা বলে সেটাও প্রচার করবেন। আপনারা আমাদের প্লাটফর্ম।আমরা কোন অন্যায়ের সহায়তাকারী নই, আমরা কোন পার্টিবাজি বা পক্ষপাতমূলক আচরন করিনা। বুক ফুলিয়ে বলছি রেকর্ডেড থাকবে এসব কথা।
আমাদের সকল দ্বায়দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারকে দিয়ে দিচ্ছি, এই রিটার্নিং অফিসার শতভাগ তাদের দায়িত্ব পালন করবে, ভালো হলে শতভাগ ক্রেডিট তাদের, ভূল হলে ডিসক্রেডিটও তাদের।
বরিশালে নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পরিবেশ অভূতপূর্ব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি-এসপিসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কার্যক্রম অভূতপূর্ব। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার পরেই আচরণ বিধি ভঙ্গের প্রশ্ন আসবে। সুতরাং তখন কিন্তু আমাদের সবাইকে সকল প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ করতে হবে, সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। ব্যক্তি রিলেশন আর প্রার্থীর বিষয়টি আলাদাই রাখতে হবে। কোনটার সাথে কোনটা মেলানো যাবে না।
সিটি নির্বাচনে প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছিলো, সংসদ নির্বাচনে এমনটা হবে না এর নিশ্চয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবেন না, কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এমন নির্বাচন করবো যেন ভবিষ্যত প্রজন্ম ও নির্বাচনের জন্য এটা যেন অনুকরণীয় হয়ে থাকে। মনে রাখবেন ব্যতিক্রমটা উদাহরণ হিসেবে গণ্য করতে পারবেন না।
নানানভাবে বিএনপির আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষের শঙ্কা রয়েছে যা দূর করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভোটার যেন ভয়ভীতি দূর করে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেজন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। কোন দল নির্বাচনে আসলো না আসলো সেটা পলিটিক্যাল বিষয়, আমার সাংবিধানিক দায়িত্বের ভেতরে পরে না। এখনও আমি মনে প্রাণে চাই সকল দল অংশগ্রহণ করুক। সকল বড় বড় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ভারসাম্য রক্ষা হয়।
বিএনপি নির্বাচনে আসলে সিডিউইল পেছানোর সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা তো এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি, যখন আসবে এবং আমাদের বলবে। তখন আমরা কমিশনে বসবো, আর তখন কতটুকু সময় বাকি আছে বা অন্য কি আছে তা নিয়ে বিবেচনা করে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবো। তবে আমরা সবাই আন্তরিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওনাদের সাথে কথা বলেছি, আমরা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে ওনাদের দাওয়াত দিয়েছি। তারপরও এখন আসলেও কোন সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের পরিচালনা বিধিতে প্রতিটি করণীয়সহ সবকিছু লেখা রয়েছে, কোন ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি কোন ব্যত্যয় হবে না। কারন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আর তারা প্রতিনিয়ত শতভাগ আশ্বস্তও করে যাচ্ছে। আপনাদের (সাংবাদিকদের) চোঁখে কিছু পড়লে তুলে ধরুন আমরা ব্যবস্থা নিবো। নির্বাচনের আগেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলোকে শনাক্ত করতে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন ত্রুটি থাকবে না।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের প্রতিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে, এবারের বিষয়ে আমাদের সামনে একটা সভা রয়েছে। সেখানে কার্যপরিধিটা নির্ধারণ করা হবে, আর সিদ্ধান্তটা পরবর্তীতে আলোচনা করে নেয়া হবে।