December 7, 2024, 2:55 pm

ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ;
ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

আবারও সারাদেশে রেল, সড়ক ও নৌপথে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। একই সঙ্গে বিএনপির শরীক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়।

এ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা এড়াতে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো।

রোববার (০৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে। বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধে সারাদেশের সড়ক, নৌপথ ও রেলপথে যান চলাচল বন্ধের কথা বলা হয়।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের আগেই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর চার স্থানে চারটি বাসে চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের সামনে সামনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে, নিউমার্কেটের গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক পরিবহনের একটি বাসে, সায়দাবাদ জনপথ মোড় ফ্লাইওভারের নিচে একটি বাসে এবং গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের সামনে মঞ্জিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

অপরদিকে, অবরোধে ঢাকায় গণপরিবহন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক গোলাম সামদানী বলেন, আগের মতই গাড়ি চলাচল করবে। অবরোধে কোনো গাড়ি বন্ধ থাকবে না। তবে যাত্রীর ওপর নির্ভর করবে লঞ্চ চলাচল। তবে বন্ধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী।

এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির নামে রাজধানীসহ সারাদেশেই চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব কিছু মাথায় রেখেই রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। যেকেনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গাতে টহল শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

র‍্যাব-পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করতে ও কড়া নজরদারিতে মোতায়েন থাকবে। এদিকে র‌্যাব-পুলিশের সাইবার ইউনিট যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিহত করতে সাইবার স্পেসে নজরদারি করছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের সিসিটিভি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। অবরোধের আগের রাতেই চোরাগোপ্তা হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে সারাদেশে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, অবরোধের নামে কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা বা জনগণের জানমালের ক্ষতি করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

রাজধানীসহ সারাদেশেই পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‌্যাবের সবগুলো ব্যাটালিয়ন রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পুরো নগরীতেই রাখা হবে র‌্যাবের চেকপোস্ট, টহল টিম ও পেট্রোলিং। গুজব প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সাইবার স্পেসে চলছে নজরদারি। কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য র‌্যাবের সাইবার ইউনিট তৎপর রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। যেকোনো নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাব সার্বক্ষণিক দেশব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ফোর্সেসের ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারী কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে রেল, সড়ক ও নৌ-পথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে ‘অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত’ শুরু করছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সারা দেশে সর্বমোট ৬৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে।

দুই দিনব্যাপী রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা মোতায়েন থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকল্প- প্রশিক্ষণ) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাট ছাড়াও বিশেষ করে রেললাইনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সতর্কভাবে দৃষ্টি রাখবে। রেল লাইন রক্ষায় সারা দেশে এক হাজার ৪৭৬টি পয়েন্টে ১০ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তিনি বলেন, এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পাঁচ হাজার ২৯৬টি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৫৫ হাজার অঙ্গীভূত আনসার নিজেদের দায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে।

এরআগে, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিএনপি আয়োজিত মহাসমাবেশ কর্মসূচি শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বিএনপি সমর্থনকারীদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করে এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলার ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর সারাদেশে একদিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। হরতালের পর টানা ৭২ ঘণ্টার (তিন দিনের) অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী। হরতালের পর প্রথম দফায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়- গত ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৬টা (৩ দিন) পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের দ্বারা মোট ৩৪টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ১২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী, রাঙ্গুনিয়া, ফেনী, চাঁদপুর, বায়েজিদ) আটটি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া, রায়গঞ্জ) চারটি, রংপুর বিভাগে (পার্বতীপুর) একটি, বরিশাল বিভাগে (চরফ্যাশন) একটি, ময়মনসিংহ বিভাগ (কেন্দুয়া) একটি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৮টি বাস, চারটি কাভার্ডভ্যান, পাঁচটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল, দুইটি বাণিজ্যিক পণ্যের শো-রুম ও একটি পুলিশ বক্স পুড়ে যায়।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- দিনের চেয়ে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এই তিন দিনে মোট ৩৪টি আগুনের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৯টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এবং বাকি ১৫টি দিনের অন্যান্য সময় সংঘটিত হয়েছে।

অপরদিকে ২৮ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত (৫ দিন) দুর্বৃত্তদের দ্বারা মোট ৮২টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর একটি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর আটটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা