December 8, 2024, 3:18 am

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন : ‘প্রেমিকের সামনেই ফাঁস দেন হিমু’

স্টাফ রিপোর্টার;

রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় তার প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)।
উরফি জিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, অভিনেত্রী হিমু বিগো নামে একটি অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন।
গত ৪ মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকাসহ ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এর আগেও প্রেমিক উরফি জিয়াকে ৩-৪ বার আত্মহত্যা করার হুমকি দেন।

অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হিমু তখনও বলেন আত্মহত্যা করবেন। তবে উরফি জিয়া পাত্তা দেননি। তবে জিয়ার সামনেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, হিমু আত্মহত্যার ঘটনায় তার খালা বাদী হয়ে উরফি জিয়াকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বংশাল থেকে উরফি জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উরফি জিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হয়েছিল এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিয়ের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাদে জিয়ার সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে জিয়ার বিচ্ছেদ হলেও হিমু আর জিয়ার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

হিমুর ২০০০ সালে বিয়ে হয় ও ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে তৌফিক নামে একজনের সুসম্পর্ক হয় হিমুর। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে ২০১৭-১৮ সালে তৌফিক সুইসাইড করেন, এরপর হিমু মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। এরপর থেকেই জিয়ার সঙ্গে হিমুর সুসম্পর্ক হয়।

২০২০ সালে জিয়া অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখে। এরমধ্যে ৪ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে জিয়া ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা হতো। এছাড়াও গত ২-৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে জিয়াউদ্দিন জানান। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।

জিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যায় জিয়া। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে হিমু ও জিয়ার মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায় হিমু ভাঙচুর করে। হিমু বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে রুমে ঢুকে। রুমের সিলিং ফ্যান ঝুলানোর হুকে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়।
তবে জিয়াউদ্দিন র‌্যাব জানান, হিমু আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখে হিমু সত্যি সত্যি ফাঁস দিয়েছে। তখন সে হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

এ সময় জিয়া পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়।
পরবর্তীতে জিয়া, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক সুইসাইড কেস বলে পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেন তখনই হিমুর দুটি মোবাইল ও হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান জিয়া।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন। হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেয়। এরপর মোবাইল ২টি বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিহির মেকআপম্যান হিসেবে হিমুর বাসাতেই থাকতেন। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিনকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাজিন পরে মারা যান। আমাদের গোয়েন্দারা মিহিরের বিষয়ে কাজ করছে। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে উরফি জিয়াকে, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, মিহির কতটা এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন। এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত্যুর কারণ পরিপূর্ণ তদন্তের পর জানা যাবে। ঘটনার সময় জিয়া হিমুর রুমেই খাটে বসা ছিলেন বলে জানান। আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দেন বলে এবার পাত্তা দেননি জিয়া। এরমধ্যেই ‘আমি কি মরতে পারি না, দেখ পারি কি না’ বলে হিমু দড়িতে ঝুলে পড়েন। জিয়া ও হিমুর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ চালাচালির প্রমাণ মিলেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা