আমার মেয়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্তা ছিলো তাকে যৌতুকের দাবীতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে মায়ের এমন অভিযোগে আদালতের নির্দেশে দাফনের ৩৫ দিন পরে গৃহবধূ মৃতা মানসুরা (সাথী)’র (২৬) লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাহী বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পটুয়াখালী এর নির্দেশক্রমে) জনাব মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল এর উপস্থিতিতে গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং গ্রামর্দ্দনে কবরস্থান থেকে ওই গৃহবধূ মানসুরার লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় ওই বাড়িতে ভীড় জমায় হাজারো মানুষ। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন –নিত্যপণ্যের মতোই বিক্রি হচ্ছে কিডনি
এসময় উপস্থিত ছিলেন, গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম, গলাচিপা থানা পুলিশ, রতনদী তালতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানাযায়, গত ১৭ আগষ্ট স্বামী পারভেজ হাওলাদারের বাড়িতে এক সন্তানের জননী অন্তস:ত্তা মানসুরার মৃত্যু হয়। স্বামীর বাড়ির লোকজন দাবি করে মানসুরা স্ট্রোক করে মারা গেছে। তবে এই মৃত্যু নিয়ে নিহত মানসুরার পিতা মাতা সন্দেহ প্রকাশ করে। এ ঘটনায় মেয়েকে হত্যার অভিযোগে গত ০৮ সেপ্টেম্বর মানসুরার মা নিলুফা বেগম পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পারভেজ সহ ৪ জনে নামের একটি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে লাশ উত্তোলনের আদেশ প্রদান করেন।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, `ময়নাতদন্তর জন্য আদালতের নির্দেশে ওই গৃহবধূর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন – ১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ
মামলা সুত্রে জানাযায়, বিগত ৮ বছর পূর্বে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ঘটনার ৬ মাস আগে জামাতা মোঃ পারভেজ চৌকিদার ব্যবসা করার জন্য আমার মেয়ের নিকট ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে এবং আমাদের নিকট হইতে উক্ত যৌতুকের ৫ লক্ষ টাকা আনিয়া দিতে বলে। এই বিষয় নিয়া প্রায় সময়ই মেয়ে ও জামাতা ঝগড়া বিবাদ ও কলহর লেগেই থাকতো এনিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক হয়, কোন সুরাহা হয় নাই। আমার মেয়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্বা হওয়া স্বত্বেও তাহার স্বামী সহ অন্যান্য আসামীরা যৌতুকের দাবীতে একাধিকবার নির্যাতন করে। আমার মেয়ে মোবাইল ফোনে আমাদেরকে এ বিষয় জানায়। ঘটনার দিন দিবাগত রাত্র অনুমান ১১.০০ টার সময় আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলে তাকে যৌতুকের দাবিতে টাকার জন্য নির্যাতন করে। পরের দিন দুপুর ১২.০০ ঘটিকায় মোবাইল ফোনে আমার জামাতা পারভেজ আমাকে জানায় সাথী মারা গেছে। তাৎক্ষণিক আমি আমার স্বামী ও আমার ছেলে নাঈমকে নিয়ে ঢাকা হইতে গাড়ীযোগে রওনা দেই। এবং যখন আমরা এসে পৌঁছাই দেখি আমার মৃতা মানসুরা (সাথী)কে আসামীরা তড়িঘড়ি করে আগেই গোসল সম্পন্ন করে দাফনের কাপড় পড়াইয়া উঠানে রাখে। আমার মৃতা মেয়ের মুখ মন্ডল শুধু দেখতে পাই। ওই দিন তড়িঘড়ি করিয়া আমার মৃতা মানসুরা (সাথী)’র শশুর বাড়ির লোকজন তাদের পারিবারিক কবরস্থানে রাত আনুমানিক ২ টায় লাশ দাফন করে।
মামলায় আরও উল্লেখ আছে, দাফনের পরের দিন লোক মুখে শুনতে পাই এবং স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার দীপাংকর সরকার মৃতা মানসুরা (সাথী)’র মাকে যানান মারা যাওয়ার পূর্বে হাত বেঁধে তার কাছে নিয়া আসে তখন সাথীর গলায় ও হাতে জখমের চিহ্ন দেখা যায়। এ বিষয়ে আমি আমার জামাতা ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের নিকট আমার মৃতা মেয়ে মানসুরা (সাথী) কে যৌতুকের দাবীতে শারীরিক নির্যাতন করিয়া হত্যার বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা কোন সদ উত্তর দিতে পারে নাই।