অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আইন অনুযায়ী কিডনি বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও নাটোরের গুরুদাসপুরে মানুষের নিত্যপণ্যের মতো দামাদামি করে কিডনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। তরুণ-তরুণীদের প্রতিটি কিডনি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আর মধ্যবয়সিদের কিডনি ২ থেকে ৪ লাখ টাকায়। এখন পর্যন্ত উপজেলায় শতাধিক কিডনি বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কিডনি বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যবসায় জড়িতরাসহ একাধিক কিডনি বিক্রেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, কিডনি বিক্রির জন্য বাজারের মাছ-মাংসের (নিত্যপণ্যের) মতো দরদাম করা হয়। এরপর ‘সিন্ডিকেট’-নির্ধারিত দামে মিলে গেলে বিক্রেতাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোগীর স্বজন সাজিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
কিডনি বিক্রেতারা জানান, তারা ‘অভাবের কারণে’ কিডনি বিক্রি করেছেন। জেলাজুড়ে বিষয়টি ওপেন সিক্রেট বলেও জানান তারা।
জানাযায়, গুরুদাসপুরের এই কিডনি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় ঢাকা থেকে। এর নেতৃত্ব দেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মোনায়েম হোসেন জেমস। তার হয়ে গুরুদাসপুরে কিডনি সংগ্রহের কাজ করেন আব্বাস ও রশিদ নামের দুই ব্যক্তি। তারা দরিদ্রদের টার্গেট করে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করেন।
কিডনি বেচাকেনা নিয়ে প্রশাসনের কাছে কোনো ‘তথ্য’ নেই। এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে পুলিশ জানিয়েছে তারা তদন্তে নেমেছে। শিগগির এই চক্রে জড়িত থাকা সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হবে।
কিডনি কেনাবেচার সত্যতা স্বীকার করেছেন চক্রের সদস্য উপজেলার আব্বাসের মোড় এলাকার রশিদ। তিনি জানান, মোনায়েম হোসেন জেমসের নেতৃত্বে কিডনি সিন্ডিকেট চলছে। তিনি ঢাকা থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিডনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের টার্গেট করে কিডনি কেনার লোক ঠিক করা হয়। পরে প্রলুব্ধদের কাছ থেকে কেনা হয় কিডনি। তরুণদের কিডনির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
চক্রের আরেক সদস্য আব্বাস (কিডনি আব্বাস) বলেন, ‘আমি নিজের কিডনি বিক্রি করেছি। এজন্য অনেকেই আমার কাছে কিডনি বিক্রি-সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য আসে। কেউ এলে পরামর্শ দিই। তবে আমি চক্রের সঙ্গে জড়িত না। জেমস ও রশিদ আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছে। তারা দুজনই হোতা।’
সম্প্রতি কিডনি বিক্রির জন্য রশিদের কাছে গিয়েছিলেন উপজেলার সাহাপুরের নজরুল ও তার মা। নজরুলের মা বলেন, ‘দেনার কারণে নজরুলের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি শুনেছি রশিদ কিডনি বিক্রি করে দিতে পারে এজন্য রশিদের সাথে যোগাযোগ করি। রশিদ আমাকে জানায়, ক্রেতা পাওয়া গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দাম দেওয়া হবে। ঢাকাতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
আরও কয়েকজন কিডনি বিক্রেতা জানান, তারা জেমস, রশিদ ও আব্বাসের মাধ্যমে ভারতে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। এজন্য তাদের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। যারা কিডনি বিক্রি করছেন তারা অভাবের কারণেই বিক্রি করেছেন।
কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে ফিরে আসা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আব্বাস ও জেমসের প্রলোভনে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলাম। তবে পরে আমি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি।’
চক্রের হোতা মোনায়েম হোসেন জেমস দাবি করেছেন তিনি কিডিনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি ঢাকায় নিয়মিত হাসপাতালে যাই এলাকার রোগীদের দেখাশোনা করতে। আমি কিডনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত নই।’
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কিডনি বেচাকেনার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ তবে আমরা
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিডনি পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’