দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরগুনা– ১ আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক দিয়ে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারা। তাদের অভিযোগ, সারাদেশে উন্নয়ন হলেও স্থানীয় এমপির উদাসীনতার কারণে উন্নয়ন হয়নি বরগুনা-১ আসনে। তাদের প্রত্যাশা সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থীকেই এবার মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য এটি দেশের একমাত্র আসন যেখানে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ৫২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম জমা দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। আর বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন মাত্র ৭জন। এ সংসদীয় আসন আওয়ালীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে গত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৬টিতেই জয় পেয়েছে নৌকা। আরও একটিতে জিতেছে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে পাঁচবারই জিতেছেন জেলা আ’লীগের সভাপতি এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
২টি পৌরসভা এবং ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে বরগুনা-১ আসনে জাতীয় পার্টি দুই এবং বিএনপি দুইবার জয়লাভ করেছে।
এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালতলী ও আমতলী নিয়ে আলাদা একটি আসন থাকলেও সবশেষ আসন পুনঃবণ্টনের সময় ৩টি উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন করা হয়। জেলার ৩টি আসনের একটিকে বিলুপ্ত করে দুটি করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন তত্তাবধায়ক সরকার, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন,খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় সব নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধকরণসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। নেতাকর্মীরা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলে একাট্টা হয়ে সাধারণ ভোটারদের তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
১০৯ বরগুনা-১ আসনটি দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবাই একাট্টা, দল যাকে মনোনায়ন দেবে তার পক্ষেই দলের হয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
বরগুনার তিনটি আসনকে একত্রিত করে ২০০৮ সালে দুটি আসন করা হয়। বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে ১০৯ বরগুনা-১।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবির, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম সরোয়ার ফোরকান ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এস এম মশিউর রহমান শিহাব।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বরগুনা-১ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ আমলে খাদ্য উপমন্ত্রী ও বতর্মানে জাতীয় সংসদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ’বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। বরগুনার জনগণকে একত্রিত করে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত করেছি। আমার উপরে প্রধানমন্ত্রী আস্থা রেখে যতবার নৌকা প্রতীক দিয়েছেন আমি তার প্রতিদান দিয়েছি। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে কখনও বিভেদ সৃষ্টি হতে দেইনি। আশা করি, আগামী নির্বাচনেও দল আমার উপর আস্থা রাখবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। এর আগেও মনোনয়ন চেয়েছি, এবারও চাইবো। আশা করি দল বিবেচনায় নেবে।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন -সাধারন সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা ও বরগুনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, বিগত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দলের যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে আমি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি এবং অনেক জেল ঝুলুমের স্বীকার হয়েছি। দলের ও নৌকা প্রতীকের সম্মান অক্ষুন্ন রেখেছি। নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। বরগুনার উন্নয়ন এবং মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তন দরকার। দল মনোনয়ন দিলে বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন মৃধা বলেন,দীর্ঘ দিন আমি আওয়ামী লীগের সাথে আছি। কখনও দল পরিবর্তন করিনি। আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেল ঝুলুম খেটেছি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমিও মনোনয়ন চাইবো। যদি আমাকে মূল্যায়ন করা হয়। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে বরগুনা ১ আসনকে একটি স্মার্ট বরগুনা উপহার দিবো।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের রাজনীতিকে এগিয়ে নেবেন এবং বরগুনা-১ আসনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ খলিলুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেক ফুল সাজানো থাকবে তার মধ্য থেকে তিনি একটি ফুল বেছে নেবেন। তিনি যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে দল থেকে আমিও মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন মনোনয়ন পাব ইনশাআল্লাহ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে বরগুনা-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম মজিবুর রহমান তালুকদারের হাত ধরে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করি এবং ১৯৯৭ সালে ৩ নং আঠারোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ২০০১ সালে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরগুনা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচন আমি পরিচালনা করি। ২০০১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই আসন থেকে জয়লাভ করেন।
গত ২০০২ সালে বরগুনা-৩ আসনে উপনির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেন এবং ওই নির্বাচনে আমি বিএনপি, জামাতের বিরুদ্ধে নির্বাচন করি। বিএনপি জামাতের তান্ডবের পরেও আমি সামান্য ভোটে পরাজিত হই। তারপর থেকেই দলের সকল কার্যক্রমের সাথে আমি জড়িত আছি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমি দলীয়ভাবে মনোনয়ন চাইবো। বরগুনা -১ আসনের জনগণ পরিবর্তন চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে যেভাবে উন্নয়ন করেছেন সে তুলনায় বরগুনায় উন্নয়ন অনেক কম হয়েছে। তাই সাধারণ জনগণ ও ভোটার পরিবর্তন চায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান শিহাব জানান, আমি দীর্ঘ সময় ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বরগুনা-১ আসনের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে মনোনয়ন দিবে। আমাকে মনোনয়ন দিলে বরগুনা সদর, আমতলী তালতলীর সর্বস্তরের জনগণের ভোটে আমি বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।