বরগুনা সদরের খাকদোন নদীটি এক সময় তার যৌবন জৌলসে ভরপুর ছিলো। ধীরে ধীরে সেই নদীটি মরা খালে পরিনত হচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে তার নাব্যতা। বিলীন হচ্ছে তার পরিবেশ ও ভারসাম্য । আর এসবের মূল কারন অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য ও থাবা। যেভাবে দখল চলছে-তা অব্যাহত থাকলে একসময় নদটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
তাই স্থানীয়দের দাবি অচিরেই দখলদারদের হাত থেকে এই নদীটি রক্ষা করা।
বরগুনার এই খাকদোন নদীর দক্ষিণ পাড়ের পোটকাখালী এলাকা থেকে মাছবাজার ব্রিজ পর্যন্ত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে নদ সংকুচিত হয়ে পরেছে । একসময় এই নদের প্রস্থ ছিল ৭৫০ মিটার। এখন কমে তা ২৩৫ মিটারে পরিনত হয়েছে । অবৈধ স্থাপনা সম্প্রসারণ করায় নদের প্রায় মাঝ পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। দখল হওয়ার কারণে নাব্যতা–সংকটে পড়েছে। নাব্যতা-সংকটের কারণে নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদের পানি দূষিত হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ ১৪৫ জন দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে একসময় নদীর সংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, বর্তমানে টিকে আছে ৪৩০টি নদী। দখল, ভরাট ও দূষণে এগুলোর অধিকাংশই শোচনীয়।
স্থানীয়রা বলেন– বরগুনার নদ-নদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, ‘কিন্তু সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সারা দেশেই চলছে নদ-নদী দখলের মহাউৎসব। অনেক নদ-নদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ রকম তো চলতে পারে না। তার কারণ, নদীর সঙ্গে আমাদের পরিবেশ ও জীবন বৈচিত্র অঙ্গা -অঙ্গিভাবে জড়িত। তাই নদ-নদী আমাদের পানির প্রধান উৎস। নদ-নদী থেকেই উৎসারিত হয় জলীয় বাষ্প এবং তা আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। নদী না থাকলে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হবে। ফসল ফলানো, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির সঙ্গেও নদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জনগণের সম্পদ নদী রক্ষার দায়িত্ব সরকার তথা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের। তাই যেসব নদ-নদী দখল-দূষণের কবলে পড়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে, সেগুলো উদ্ধারে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। নদ-নদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। আমরা চাই, বরগুনার খাকদোন নদসহ দেশের আর যেসব নদ-নদী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলো উদ্ধারে সচেষ্ট হবে। নদী রক্ষায় নীতি ও আইন রয়েছে। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
বরগুনা পৌরসভার বাসিন্দা ও প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক মোঃ জুলফিকর আহম্মেদ জলফু বলেন,বরগুনার খাকদোন নদীটি এক সময় অনেক গভীরতা ও বড় ছিলো। অভৈধ দখল দারদের কবলে ধীরে ধীরে সেই নদীটি আজ মরে যাচ্ছে। এখন দেখতে খালের মতো মনে হয়। নদীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে। এ কারণে নদের নাব্যতা–সংকটে পড়েছে। প্রতিদিন এই নদী দিয়ে দুটি লঞ্চ ঢাকা যাওয়া আসা করে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি এই নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচল হুমকির মুখে পরবে। তাছাড়া শীতের মৌসুমে এই নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচল করতে খবই সমস্যা। তাই জেলা প্রশাসনের কাছে আমি আপনাদের মাধ্যমে জোর দাবি জানাচ্ছি যাতে এই নদীটি তার যৌবন ফিরে পায় এবং অবৈধ দখলদারদের আইনের আওতায় আনা হয়।
এবিষয়ে বরগুনা নদী বন্দর, সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোঃ রিয়াদ হোসেন জানান–আমি গত ৩ মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। অনেক কিছুই আমার জানা নেই। তবে নতি পত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ১৪৫ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক মহোদয় কে অবহিত করা হয়েছে। তাদের নির্দেশ ও অনুমতিক্রমেই এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করে হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা পেলে-ই উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।