দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় অন্যান্য সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে।
গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত অব্যাহতি পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তার লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। যার অনুলিপি দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও দেয়া হয়েছে। সোমবার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে।
এ বিষয়ে পঙ্কজ নাথ ৭১বিডি২৪কে বলেন, ‘আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সে বিষয়ে আমিও চিঠি পেয়েছি। কিন্তু কেন দিয়েছে তা আমি জানি না। তবে জানার চেষ্টা করছি।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অপির্পত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় অন্যান্য সকল পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করছে।’
অব্যহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। তিনি বলেন, ‘গত চার বছরে মেহেন্দীগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
পঙ্কজ নাথের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানপড়েন চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। পঙ্কজ নাথের বিরোধী পক্ষ ছিল বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। দুই পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানিও ঘটেছে।
তাছাড়া হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেয়া হলে পঙ্কজ নাথ নিজের অনুসারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করতেন বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল পঙ্কজের।
হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ নাথের আধিপত্য থাকায় কোণঠাসা ছিলো জেলা আওয়ামী লীগ অনুসারীরা। সম্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক ও পঙ্কজ নাথের মধ্যে ফোনে কথোপকথন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই ফোনালাপে পঙ্কজ নাথ মেহেন্দিগঞ্জ পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর কথা বলেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ অনুসারীরা পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদ পঙ্কজ নাথসহ দেশে থাকা হিন্দুদের নিকৃষ্ট বলে অভিহিত করেন। এই নিয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেহেন্দিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রাজনীতি অনেকটা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। যে কারণে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে পঙ্কজ দেবনাথের নিরব দ্বন্দ্ব চলছিল।
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও সরানো হয় পঙ্কজ দেবনাথকে।