‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান।’ এ প্রতিপাদ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্থানীয় বিট অফিসাররা তার কর্মচারীর মাধ্যমে বনের গাছ কেটে প্রতিনিয়ত বিক্রি করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে উজার করছেন বন। সরকার প্রতি বছর বন রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সামাজিক বনায়ন সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন করছেন। আর এ সব বন রক্ষার জন্য বন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ”রক্ষক ভক্ষক সেজে” বন খেকো কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে বন উজার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এমন ঘটনা পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বনগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক এবছর বনে মাছ ধরার পাশ ইস্যু বন্ধ করে দেন। আর এ সুযোগে টাকার বিনিময়ে গাছ কেটে বিক্রি, মাছ ধরার জন্য গোপনে বন বিট দিয়ে ও বনে মহিষ চরিয়ে গাছ ভেঙ্গে উজাড় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখ ও তার কর্মচারী হাসান ইমাম নিপুর বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যার সময় একটি ট্রলার এসে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ভাঙন কবলিত এলাকায় ট্রলার নিয়ে ১৫-২০জন লোক সড়কের দুই পার্শ্বে বনবিভাগের রোপনকৃত মেহগনি, চাম্বল ও আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কড়াত দিয়ে কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হাসান সরদার এলাকার কিছু লোকজন সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা অবস্থায় একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নাসির গাজী, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সফিউল প্যাদা ও হাদী হাওলদারকে দেখতে পান।
এ সময় (ইউপি সদস্য মো. হাসান সরদার) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কেন সরকারি গাছ কাটতেছো? তখন তারা জানায়, বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখের অনুমোতি সাপেক্ষে আমরা গাছ কাটতেছি।
ইউপি সদস্য হাসান আরও জানান, ওই এলাকায় বসবাসরত এক নারী জানান, গত বুধবার (১০ আগস্ট) বিকেলে এসে বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখ ও তার কর্মচারী হাসান ইমাম নিপু এসে মো. নাসির গাজী, সফিউল প্যাদা ও হাদী হাওলদারকে ২০-৩০টি গাছ কাটার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যান। মামলার ভয়ে এলাকার লোকজন মুখ খুলছেন না বলে ওই নারী জানান।
স্থানীয় সমাজসেবক রুবেল মুন্সি জানান, দক্ষিণ চরবিশ্বাসের চরে গত কয়েক বছর আগে বন বিভাগের রোপনকৃত সুন্দরী গাছ বাগানে স্থানীয় হারুন খলিফাসহ বেশ কিছু মহিষ লালন-পালনকারি জোড়া প্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে মহিষ চরিয়ে বাগানের সমস্ত গাছ ভেঙে উজাড় করে ফেলেছে। এদের মাধ্যমে বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখ প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা আরও জানায়, বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখ গোপনে ঘন বেড় জাল দিয়ে জেলেদেরকে মাছ ধরার সুযোগ করে দেয়ায় পোনা মাছ শিকারের কারণে এক দিকে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের মৎস্য সম্পদ। অপর দিকে এর মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বিট অফিসার আবদুল ওহাব শেখের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান সরদারসহ বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে জানতে পারি, গত বৃহস্পতিবার সন্ধার দিকে স্থানীয় বিট অফিসারের যোগসাজোসে বনের গাছ কেটে নিয়ে গেছে বনদস্যুরা। তিনি এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জেনেছি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।