(৭১বিডি২৪) অনলাইন ডেস্ক:
পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ টি২০ ক্রিকেটের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের দেওয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য ১৯.১ ওভারে টপকে যায় টাইগাররা। সঙ্গে হাতে নেয় ফাইনালের ছাড়পত্র। আগামী ৬ মার্চ শিরোপার লড়াইয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতের মুখোমুখি হবে মাশরাফিবাহিনী।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশি বোলারদের আক্রমণের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শহীদ আফ্রিদির পাকিস্তান। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনে প্রথম আঘাত হেনেছিলেন পেসার আল আমিন হোসেন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই খুররম মনজুরকে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী করান তিনি। পরে চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে পাকিস্তানের আরেক ওপেনার সারজিল খানকে বোল্ড করেন স্পিনার আরাফাত সানি।
এদিকে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ হাফিজকে এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে ফেলেন। পরে নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাসকিন আহমেদের বলে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে পরিণত হন উমর আকমল।
তবে ৮.২ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন শোয়েব মালিক ও সরফরাজ আহমেদ। পরে ১৬.৪ ওভারে আরাফাত সানি শোয়েব মালিককে সাব্বিরের ক্যাচে পরিণত করে এ জুটি ভাঙ্গেন। শোয়েব মালিক ৩০ বলে ৪১ রান সংগ্রহ করেন। আর অন্য ব্যাটসম্যানরা তেমন সুবিধে করতে না পারলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে সরফরাজ আহমেদ ৪২ বলে ৫৮ রান সংগ্রহ করেন। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি। আর তার এ হাফসেঞ্চুরিতে ভর করেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বাংলাদেশের পক্ষে আল আমিন হোসেন ৩ উইকেট নিয়েছেন।
জয়ের জন্য ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশও। ইনিংসের ১.৪ ওভারে মোহাম্মদ ইরফানের বলে এলবিডব্লিউ হন ওপেনার তামিম ইকবাল। ৪ বলে ৭ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। পরে সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৪ রানে শহীদ আফ্রিদির বলে নবম ওভারের প্রথম বলে আউট হয়ে যান সাব্বির রহমান। তবে অন্যপ্রান্তে ঠিকই সাবলীল ব্যাটিং করে রানের চাকা গতিশীল রেখেছিলেন ওপেনার সৌম্য সরকার। ১৩.২ ওভারে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে আমিরের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমও শোয়েব মালিকের বলে এলবিডব্লিউ এর শিকার হন। এ সময় বাংলাদেশ কিছুটা চাপে পড়লেও বল আর রানের ব্যবধান কম থাকায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই ছিল। কিন্তু মোহাম্মদ আমিরের বলে ১৭.২ ওভারে সাকিব আল হাসান বোল্ড হয়ে গেলে ম্যাচে টানটান উত্তেজনা ফিরে আসে।
কিন্তু মাঠে নেমেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির ঝড়ো ব্যাটিং বাংলাদেশকে নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমিরের প্রথম দুই বলেই দুটি চার মেরে বল ও রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন মাশরাফি। আর আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা পাকিস্তানি বোলারদের একাধিক ‘নো বল’ বাংলাদেশের জয়কে আরও সহজ করে তুলে। পরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৫ বলে ২২ রান ও মাশরাফির ৭ বলে ১২ রানের ইনিংসে ৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার।
মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এশিয়া কাপ টি২০ ক্রিকেটের এ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হয়েছিল। আর তাতে বাংলাদেশ জিতে যাওয়ায় টুর্নামেন্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এর আগে ৩ ম্যাচের ৩টিতে জিতে ইতোমধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ভারত।
পাশাপাশি এ ম্যাচ বাংলাদেশের একটি দুঃখও ঘুঁচিয়েছে। চার বছর আগে প্র্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও এই পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেস্তে গিয়েছিল বাংলাদেশের।
এ ম্যাচে ইনজুরির কারণে বাংলাদেশ কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল। তার পরিবর্তে স্পিনার আরাফাত সানিকে দলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবারের আসরে প্রথমবারের মত ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালকে দলে নেওয়ায় বাদ পড়েছেন নুরুল হাসান সোহান। তার পরিবর্তে দীর্ঘদিন পর উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করেছেন মুশফিকুর রহিম।